বেগুন বাড়ির পানি পড়া (দ্বিতীয় পর্ব)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

(দ্বিতীয় পর্ব)

আমরা লোকটির সাথে কথা বলার কিছুক্ষণ পরেই হুজুর বাড়ির ভিতর থেকে বের হয়ে এলেন। বয়স খুব বেশি নয় ২৫/২৬ বছরের যুবক। মুখে দাড়ি আছে, পরনে লুঙ্গি, গায়ে সাধারন পাঞ্জাবী। চারজন আনসারের সাথে আরো চার পাঁচ জন লোক তাকে ঘিরে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। হুজুরের কাছে কেউ ভিরতে পারছে না। তাকে এভাবে পাহারা দিতে দেখে মনের ভিতরে প্রশ্ন দেখা দিল। হুজুরকে যদি আনসার দিয়ে এভাবে পাহারা দেয়া হয় তাহলে মানুষ হুজুরের নিকট যাবে কিভাবে এবং পানি পড়া নিবে কিভাবে?

কিন্তু পরক্ষণই আমার ভুল ভাঙল। মুহুর্তেই পানি পড়ার জন্য লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ল। মানুষের ঠেলা ধাক্কায় আনসারসহ আট দশজন পাহারাদার কখনও কাত হয়ে কখনও চিৎ হয়ে পড়ে যাচ্ছেন। মানুষ জনের ঠেলা ধাক্কা সামাল দিতে না পেরে কখনও কখনও পাহারাদারদের সাথে হুজুরও কাত চিৎ হয়ে পড়ে যাচ্ছেন। মানুষের ঠেলা ধাক্কায় কাত চিৎ হলেও তাকে বিরুক্তভাব প্রকাশ করতে দেখলাম না। তবে পাহারাদারসহ হুজুরের দুর্দশা দেখে পানি পড়া নেয়ার কথা ভুলেই গেলাম। ধাক্কাধাক্কি থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য কিছুটা দূরে সরে গেলাম। দূরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখতে লাগলাম। ঠেলাঠেলি করতে গিয়ে মাঝে মাঝে পানি পড়া নিতে আসা লোকজনও চিৎ হয়ে পড়ে যাচ্ছে। মানুষের চিৎ কাত হওয়া দেখে হাসি আটকাতে পারছিলাম না। হাসির মাঝেও ভাবতে লাগলাম, পানি পড়া নিতে এসে মানুষ যদি এইরকম ঠেলাঠেলি করতে থাকে, অবশেষে ঠেলাঠেলির চোটে না আবার হুজুরকেই চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়।

ঠেলাঠেলি ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই হুজুর মসজিদে রওনা হলেন। ধাক্কাধাক্কি অবস্থায় আমরাও তার সাথি হলাম। হুজুর আগে আগে আমরা পাঁচ ছয় শ’ লোক তার পিছনে পিছনে। মসজিদ খুব দূরে নয়। অল্প কিছুক্ষণ পরেই মসজিদে গিয়ে পৌঁছিলাম। কিন্তু মসজিদে পৌঁছিলেও মসজিদের ভিতরে ঢোকার সৌভাগ্য হলো না। গ্রামের মসজিদ আর কত বড় হয়? বিশ পঁচিশ হাত লম্বা টিনের ঘরে আধা ভাঙা কাঠের দরজা। প্রতি শুক্রবারে হয়তো বিশ পঁচিশজন লোকে নামায পড়তো সেই জায়গায় হঠাৎ করে হাজার লোকের সমাগম হওয়ায় মসজিদের ভিতরে তো দূরের কথা মসজিদের সামনের মাঠেও সংকুলান হলো না। মসজিদের সামনের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে গিয়ে অতি উৎসাহী কিছু নামাজির ধাক্কার চোটে হুড়মুড় করে মসজিদের নিচে ধান ক্ষেতে গিয়ে পড়লাম। ধাক্কা খেয়ে ধান ক্ষেতে পড়ে গিয়ে আল্লাহর কাছে শুকর আদায় করতে লাগলাম। কারণ ধাক্কা খেয়ে শুধু আমি একাই নিচে পড়ি নাই আমার মত কয়েকশ’ লোক নিচে পড়েছে। যদি এই লোকগুলো ঘাড়ের উপর পড়তো তাহলে আর পানি পড়া খাওয়ার প্রয়োজন হতো না সোজা লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হতো। লাশ হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই আল্লাহর শুকর করতে লাগলাম। ধাক্কা খেয়ে ক্ষেতে নামলেও একদিকে ভালই হয়েছে প্রশস্ত জায়গা হওয়ায় হুড়োহুড়ি করতে হচ্ছে না। তবে নামায পড়ার জন্য কোন বিছানা পেলাম না, বাধ্য হয়ে অন্যের কাছ থেকে খামছাখামছি করে কিছু ধানের নাড়া যোগাড় করে তার উপর দাঁড়িয়েই নামায পড়লাম।

নামায শেষে মোনাজাত করে হুজুর বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। মসজিদে আসার পথে যত না ধাক্কাধাক্কি ঠেলাঠেলি করেছি ফেরার পথে তার চেয়েও দ্বিগুণ ধাক্কাধাক্কি করতে লাগলাম। আসার পথে চার পাঁচশ’ লোক হলেও ফেরার পথে হাজারের উপরে লোকের ঠেলাঠেলি, কার আগে কে হুজুরের সাথে যাবে এইটা নিয়ে তুমুল ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়েছে। অনেকেই পারলে হুজুরের গায়ের উপর উপর হয়ে পড়ে যায়। ঠেলাঠেলি ধাক্কাধাক্কি করতে করতে কোনরকমে হুজুর বাড়ি পৌছিলেন আমরাও তার সাথে সাথে পৌঁছিলাম। বাড়ি পৌঁছেই সামনের উঠানের দক্ষিণ পার্শ্বের শেষ সীমানায় একটি উঁচু জায়গায় দক্ষিণ মুখ করে দাঁড়ালেন। মাইক আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। হুজুর হাতে মাইক নিয়ে সবাইকে বাড়ির নিচে জমিনে লাইন ধরে উত্তর মুখ করে দাঁড়াতে বললেন। সবার হাতেই তিন চারটি করে বোতল। কোন বোতলে পানি কোন বোতলে তেল। কয়েকটি বোতলের দোকানও বাজারে বসেছে। খালি বোতল দুই টাকা, তেলসহ বোতল পাঁচ টাকা। আমিও দু’টি বোতল কিনেছি। ডেপুটি কন্ট্রোলার সাহেব পাঁচটি বোতল কিনেছেন। নিজের জন্য দু’টি, বাড়ির গিন্নিসহ ছেলে মেয়েদের জন্য আরো তিনটি। সামনের লাইনে দাঁড়িয়েছি। আমার পাশেই ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেব দাঁড়িয়েছেন। কয়েক হাজার মানুষ। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর হয়ে গেল। সবাই সামনের লাইনে দাঁড়ানোর জন্য ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দিয়েছে। ধাক্কার চোটে উল্টে পড়ে যাওয়ার অবস্থা। বহু কষ্টে দুই হাতে দু’টি বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। হুজুর সবাইকে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে বোতলের মুখ খুলতে বললেন। হুজুরের নির্দেশ অনুযায়ী আমিও বোতল দু’টির মুখের কর্ক খুলে উদাম করে মাইকের দিকে ধরে রাখলাম।

কিছুক্ষণ পরেই হুজুর মাইকে তেলপড়া দিতে লাগলেন। তিনি যে কি বলছেন তা কিছুই বোঝা গেল না। উর্দু, আরবী, ফারসী, নাগরী, পাহাড়ী না অন্য কোন ভাষায় দোয়া বা মন্ত্র পড়ছেন তা বোঝার শক্তি কারোরই হলো না। অসংলগ্ন ভাষায় কিছুক্ষণ মন্ত্র আওড়িয়ে তিনবার মাইকে ফুঁ দিলেন। ফুঁ দেয়ার পর তেলপড়া ও পানিপড়ার নিয়ম কানুন বলে দিলেন। তেলপড়া মাথাসহ শরীরে মালিশ করতে বললেন এবং পানিপড়া তিন বেলা খেতে বললেন। পানিপড়া ও তেলপড়া শেষ হওয়ার আগেই পানির ভিতর পানি আর তেলের ভিতর তেল দিয়ে সাত দিন পর্যন্ত খেতে নিতে বললেন। তেলপড়া ও পানিপড়ার নিয়ম কানুন বলে দেয়ার পরই তিনি মাইক ছেড়ে দিলেন। মাইক ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথেই মানুষজন লাইন ভেঙে হুজুরের দিকে হুমড়ি খেয়ে ছুটলো। বোতলের মুখ ভালো করে আটকিয়ে সারতে পারলাম না। মানুষের ধাক্কায় বোতল থেকে অর্ধেক পানি ছিটকে পড়ে গেল। বহু কষ্টে বোতলের মুখ লাগিয়ে প্যান্টের দুই পকেটে ভরে হুজুরের কাছে যাওয়ার জন্য ক্ষেত থেকে বাড়ির উপরে উঠার চেষ্টা করতে লাগলাম। জমি থেকে বাড়ি অনেক উঁচু এবং খাড়া। জমিন থেকে প্রায় এক মাথা উঁচু হলেও উঠতে বেগ পেতে হলো না। পিছনের মানুষের ধাক্কা খেয়ে এক লাফেই তিড়িং করে বাড়ির উপরে উঠে গেলাম। সবাই হুজুরের মুখের সরাসরি ঝাড়া নেয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। আমিও কাছে যাওয়ার জন্য প্রাণপনে চেষ্টা করছি কিন্তু বার বার ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ায় কাছে যেতে পারছি না। অনেক চেষ্টার পর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে হুজুরের কাছে গিয়েও কথা বলার সুযোগ হলো না। হাজার কণ্ঠের চিল্লাচিল্লিতে কারো কথা কেউ বুঝতে পারে না। হাত ইশারায় নিজেকে দেখাতেই হুজুর ঠাস করে ঘাড়ে একটি থাপ্পর দিয়ে বলল, নাই নাই, রোগ নাই।

আমার কি রোগ হয়েছে আর উনি কি রোগের থাপ্পর দিলেন কিছুই বুঝতে পেলাম না। তবে থাপ্পরের চোটে কোঁকড়া লেগে গেলাম। একে দুর্বল শরীর তারোপর হুজুরের বলিষ্ঠ থাপ্পর খেয়ে চোখে সরিষার ফুল দেখতে লাগলাম। কোন রকমে তাল সামলে ফাঁকে এসে চোখ বন্ধ করে মাটিতে বসে পড়লাম। থাপ্পরের ব্যাথায় মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগল। মনে মনে চিন্তা করলাম, যা থাপ্পর খেয়েছি একবারই খেয়েছি, রোগ ভাল হোক বা না হোক এই রকম থাপ্পর মার্কা ঝাড়া নেয়ার জন্য দ্বিতীয়বার আর ওই হুজুরের কাছে যাওয়ার চিন্তাও করবো না।

অনেকক্ষণ পর উঠে দাঁড়ালাম। দাঁড়িয়ে দেখি আমার পাশেই এক ভদ্রলোক মেয়ে নিয়ে ঘুরাঘুরি করছেন। ভদ্রলোক টয়োটা গাড়ি নিয়ে ঢাকা থেকে এসেছেন। সেই সময়ে অবস্থাপন্ন লোকজন ছাড়া প্রাইভেট গাড়ি চড়ার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের ছিল না। মেয়েটি আধুনিকা। সুস্থ্যই মনে হলো তারপরেও কি কারণে যে মেয়েকে নিয়ে হুজুরের কাছে এসেছেন আমার বোধগম্য হলো না। মেয়েকে নিয়ে হুজুরের কাছে যাওয়ার জন্য ভদ্রলোক খুব চেষ্টা করছেন। মানুষের ভিরে কাছে যেতে পারছেন না। মেয়ের বাবা ভির ঠেলে হুজুরের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলেও মেয়ের তেমন আগ্রহ নেই। মেয়েটি নাক সিটকাচ্ছে। অর্থৎ হুজুরের প্রতি তার বাবার ভক্তি হলেও মেয়ের বিশ্বাস ভক্তি কিছুই নেই। হয়তো বাবার কথা ফেলতে পারছে না তাই অনিচ্ছা সত্বেও নাক সিটকাতে সিটকাতে বাবার সাথে এসেছে।

বেলা তখন তিনটা পার হয়েছে। হুড়োহুড়ি ধাক্কাধাক্কির ঠেলায় খুব খিদে পেয়েছে। ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেবকে খুঁজতে লাগলাম। তাকে পেতে বেশি সময় লাগল না। তিনিও হুজুরের মুখের সরাসরি ঝাড়া নেয়ার জন্য খুব চেষ্টা করেছেন কিন্তু জোয়ানদের ঠেলা ধাক্কার কাছে কুলিয়ে উঠতে পারেন নাই, অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে ফাঁকে এসে কলাগাছের নিচে বসে হাপাচ্ছেন।

কাছে গিয়ে বড় ভাই বলে ডাক দিতেই মুখ তুলে তাকালেন। মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি উনার মুখ শুকিয়ে চুপসে গেছে। হুজুরের কাছে যাওয়ার জন্য ধাক্কাধাক্কি করতে করতে যেমনি ক্ষুধার্ত হয়েছেন তেমনি দুর্বল হয়েছেন। তার মুখের অবস্থা দেখে মনে হলো হুজুরের পানি পড়া খেতে এসে শরীরে যা এনার্জি ছিল তা পুরোটাই প্রায় শেষ করে ফেলেছেন, এখন ট্রাঙ্ক রোড পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারবেন কিনা সন্দেহ। ভাত খাওয়ার প্রস্তাব দিতেই রাজী হয়ে গেলেন। আমি উনাকে সাথে নিয়ে খাবার হোটেলে গেলাম। দুপুরের সময়। সব হোটেলেই প্রচন্ড ভির। ভিরবাট্টা ঠেলে দিল্লী হোটেলে খেতে বসলাম। টিনের প্লেট ভরে মোটা চালের ভাত দিল। মাছ, মাংস, ডিমসহ কয়েক পদের তরকারী আছে। ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেব শিং মাছ আর বেগুন পছন্দ করলেন। আমিও উনার সাথে সায় দিলাম। কারণ গ্রামের নাম বেগুন বাড়ি, বেগুন বাড়ির পানি পড়া খেতে এসে শুধু পানি খেয়ে যাবো বেগুন খাবো না এটা কি করে হয়! বেগুনের স্বাদ না নিলে বেগুন বাড়ি নামটি কেন হলো বুঝবো কি করে। কাজেই ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেবের সাথে আমিও বেগুন দিতে বললাম।

প্রথমেই বেগুনের তরকারী পাতে ঢেলে মুখে দিলাম। তরকারী খেয়ে মুখ উল্টে আসার অবস্থা। মনে হলো লবন, মরিচ, হলূদ আর পানি দিয়ে শুধু আগুনে জ¦াল দিয়েছে। এতটুকু স্বাদও হয়নি। বিস্বাদের চোটে গলা দিয়ে আর খাবার ঢুকতে চায় না। অর্ধেক ভাত খেয়েই মুখ মেরে গেল। খাওয়া ছেড়ে দুইজনই হাত ধুয়ে উঠলাম। বিস্বাদ মার্কা বেগুনের তরকারী খেলেও বিল কম নয় চুয়াল্লিশ টাকা দিতে হলো।

ফেরার সময় কোনো রিক্সা ভ্যান না নিয়ে হেঁটেই রওনা হলাম। কারণ আসার সময় ভ্যানে চড়ে যে শাস্তি পেয়েছি সেটা তো আর ভুলি নাই, দ্বিতীয়বার আর ঐ ভুল করতে রাজী নই। আমি হাঁটার প্রস্তাব দিতেই ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেবও রাজী হলেন। ক্ষুধার্ত শরীরে পেটে কিছু দানাপানি পড়ায় তিনি ভালই এনার্জিবোধ করছেন। যা চিন্তা করেছিলাম তা নয় তিনি আমার চেয়েও জোরে জোরে হাঁটতে লাগলেন।

ট্রাঙ্ক রোডে এসে দেখি রাস্তার পাশে অস্থায়ী বাজার বসেছে। হুজুরের বাড়ি যাওয়ার সময় এই বাজার দেখি নাই। ফাঁকা মাঠ দেখে গেছি, সেই ফাঁকা মাঠেই বাজার বসেছে। এই বাজার অন্য সময় বসে না সম্পূর্ণ অস্থায়ী বাজার। শুধু হুজুরের বাড়িতে পানি পড়া নিতে আসা লোকজনের জন্যই এই বাজার। ঢাকা শহরসহ অনেক জায়গার লোকজনই হুজুরের পানি পড়া নিতে আসে। শহরের লোকজন এখান থেকে টাটকা শাক-সব্জি সস্তায় পেয়ে কিনে নিয়ে যায়।

ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেব পঁচিশ টাকা দিয়ে বড় একটি তাজা ষোল মাছ কিনেছেন। আমিও তাকে অনুসরণ করে অনেকগুলি মাগুর মাছ পঁয়ত্রিশ টাকা দিয়ে কিনে নিলাম। সব্জির বাজারে গিয়ে তাজা শাক সব্জি দেখে মন মানলো না। কচি লাউ জাংলা থেকে একটু আগেই কেটে এনেছে। দুইজনে দু’টি কচি লাউ ১২ টাকা দিয়ে কিনে নিলাম। আমাদের দেখাদেখি আরো অনেক লোক কেনাকাটা করল। বিক্রেতারা খুব খুশি। স্থানীয় বাজারের চেয়ে অনেক বেশি দামেই বিক্রি করছে। তবে আমরা যারা ঢাকা থেকে এসেছি তারাও জিতেছি। তাজা মাছ আর টাটকা শাক-সব্জি যে দামে কিনেছি ঢাকার তুলনায় অনেক সস্তা।

কিছুক্ষণ পর ভুয়াপুর থেকে ঢকাগামী বাস চলে এলো। আমি আর ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেব প্রথমেই বাসে উঠে সিট দখল করে বসলাম। মূহুর্তেই বাস ভরে গেল। যাত্রী ভরে যাওয়ায় বাস তাড়াতাড়িই ছেড়ে দিল।

রাস্তায় খুব একটা দেরি করল না। ঢাকার যাত্রী দিয়ে বাস ভরা। বাস দ্রুত চলতে লাগল। অন্যান্য বাসের তুলনায় অনেক আগেই আমরা ঢাকায় চলে এলাম। ঢাকায় যখন পৌছলাম তখন রাত নয়টা। বাসায় ফিরে শরীর ম্যাজ ম্যাজ করতে লাগল। মনে হলো গায়ে জ্বর আসবে। পরক্ষণেই মনে হলো হুজুরের পানি পড়া আর তেল পড়া আছে, এগুলোর সদব্যবহার করলে জ্বর কাছেও ভিরতে পারবে না। হুজুরের দেয়া নিয়ম অনুযায়ী রাতে পানি পড়া খেয়ে শরীরে তেল মালিস করে ঘুমালাম।

সকাল বেলা ঘুম ভাঙতেই কোঁকড়া লেগে গেলাম। সারা শরীরে ব্যাথা। ব্যাথার চোটে নড়তে পারছি না। মনে হলো সারা শরীর যেন কেউ সাপ পিটানোর মত করে পিটিয়ে দিয়েছে। পাশের রুমে গিয়ে দেখি ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেবও শুয়ে আছেন। কোমরের ব্যাথায় কোকাচ্ছেন। কাছে গিয়ে বললাম, বড় ভাই কোকাচ্ছেন কেন? তাড়াতাড়ি তেল মালিশ করেন আর পানি পড়া খান– সেরে যাবে।

আমার কথা শুনে ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেব বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকলেন, কোনো কথা বললেন না। আমি তার কোকানো দেখে নিজের শরীরের ব্যাথা থাকার পরও হাসি আটকাতে পারলাম না– হো হো করে হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।

অফিস টাইম পার হওয়ার পরও দেখি তিনি শুয়ে আছেন। কোমরের ব্যাথার চোটে আর অফিসেই গেলেন না। পরপর তিনদিন অফিস কামাই করে আমার মতই বিছনায় শুয়ে শুয়ে দিন পার করলেন।

ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেবের অবস্থা দেখে বিছানায় শুয়ে শুয়ে নিজে নিজেই হাসতে লাগলাম। যে লোকটি সুস্থ্য অবস্থায় পানি পড়া খেতে বেগুন বাড়ি গেল সেই লোক পানি পড়া খেয়ে সুস্থ্য হওয়া তো দূরের কথা উল্টো আরো অসুস্থ্য হয়ে বিছনায় পড়ে কোকাচ্ছেন। হায়রে বেগুন বাড়ির পানি পড়া, তিনি আশা করলেন কি আর হলো কি!

(সমাপ্ত)

প্রথম পর্ব পড়ার জন্য নিচে ক্লিক করুন

https://www.sahityablog.com/%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%97%e0%a7%81%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a7%9c%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%aa%e0%a7%9c%e0%a6%be/

Loading

Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *