বেগুন বাড়ির পানি পড়া

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

হঠাৎ শরীর দুর্বল, খাদ্যে অরুচি, চোখ দু’টো হলুদ হলুদ ভাব। দুইদিন শরীরের দুর্বলতা নিয়েই অফিস করেছি। তৃতীয় দিন দুপুরে আনন্দ পত্রের ম্যানেজার খসরু ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি আমার চেহারা দেখেই চমকে উঠলেন। নিজের থেকেই তিনি আমাকে বিকালে পুপুলার ডায়গনেস্টিক সেন্টারে তার বন্ধু ডাঃ মোস্তাফিজ-এর কাছে নিয়ে গেলেন। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জন্ডিস ধরা পড়ল। ডাক্তার আমাকে ঔষধ হিসাবে ছয়টি এন্টাসিড আর সুস্থ্য হওয়ার জন্য সম্পুর্ণ বেড রেস্ট দিলেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অফিস থেকে ছুটি নিয়ে শুয়ে বসেই দিন কাটাচ্ছি। সাত দিন পার হওয়ার পর একটু সুস্থ্য সুস্থ্য মনে হচ্ছে। আমার পাশের রুমে থাকেন পূবালী ব্যাংকের ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেব। বয়স্ক মানুষ। কয়েক মাস পরেই রিটায়রমেন্টে চলে যাবেন। বড় ভাই বলে ডাকি। বাড়ি নোয়াখালি। ভালো নামাজি। পীর ফকিরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস।

ভদ্রলোক অফিস থেকে বিকেলে বাসায় ফিরে আমার রুমে এসে বললেন, প্রামানিক সাব, টাংগাইলের বেগুনবাড়ি এলাকায় এক হুজুর পানি পড়া দেয়, তার পানি পড়া খেলে অনেক কঠিন রোগও নাকি ভাল হয়।
আমি চৌকির উপর শুয়ে ছিলাম। তার কথা শুনে শোয়া থেকে আড়মোড়া দিয়ে উঠে বিছানায় বসে বললাম, আপনি এ খবর পেলেন কই?
তিনি বললেন, আমাদের অফিসের অনেক লোক সেখানে গিয়েছে এবং তারা পানি পড়া খেয়ে নাকি অনেক উপকার পেয়েছে।
— আপনি কি যাবেন?
— আমি আগামী কালকেই যাব। আপনি ইচ্ছা করলে আমার সাথে যেতে পারেন।
— আপনি কি হুজুরের বাড়ির ঠিকানা জানেন?
উনি আমাকে সায় দিয়ে বললেন, আমাদের অফিসের যারা হুজুরের বাড়ি গিয়েছিলেন আমি তাদের কাছ থেকে ঠিকানা যোগাড় করে নিয়ে এসেছি। বেগুনবাড়ি হুজুরের পানি পড়ার কথা বললে সবাই চেনে।
বেগুনবাড়ি হুজুরের প্রতি উনার আগ্রহ আর হুজুরের প্রতি ভক্তি দেখে আমিও যেতে রাজী হলাম।

পরদিন সকাল বেলা উঠে হালকা নাস্তা করেই দুইজনে রওনা হলাম। ডাইরেক্ট টাঙ্গাইল গামী বাসে উঠে বসলাম। ১৯৮৯ সালের জানুয়ারী মাসের শেষ দিকের ঘটনা। সেই সময়ে দূরের রাস্তা তো দূরের কথা ঢাকা শহরেও যানজট ছিল না। বেলা দশটার আগেই টাঙ্গাইল গিয়ে পৌঁছলাম। টাঙ্গাইলে বাস বদল করে কালিহাতি গিয়ে নামলাম। কালিহাতি নেমে লোকজনকে বেগুন বাড়ি পানি পড়া হুজুরের বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, এখান থেকে পশ্চিম দিকে ছয়/সাত মাইল হেঁটে যেতে হবে।

ছয়/সাত মাইল রাস্তা হাঁটার কথা শুনে আমার পানি পড়া খাওয়ার সাধ মিটে গেল, অস্বস্তিবোধ করতে লাগলাম। অসুস্থ্য শরীর নিয়ে এত রাস্তা আমার পক্ষে হাঁটা সম্ভব নয়। আমি ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেবকে বললাম, ভাই, আমার পক্ষে এতো রাস্তা হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়। আপনি একাই যান, আমি ঢাকায় ফিরে যাবো।
আমার কথা শুনে ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেব কিছুটা বিমর্ষ হলেন। এতদূর এসে হুজুরের পানি পড়া না নিয়ে খালি হাতে ফিরে যাওয়া উচিৎ মনে করলেন না। তিনি আরো লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন।

রাস্তার পশের পানের দোকানদারকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, আপনারা ভুল পথে এসেছেন। আপনারা এলেঙ্গা ফিরে যান। এলেঙ্গা থেকে ভুয়াপুরগামী যে কোন বাসে উঠে বেগুন বাড়ি বলতে হবে না শুধু পানি পড়ার কথা বললেই বাসওয়ালারা আপনাদেরকে পানি পড়া হুজুরের বাড়ির কাছে নামিয়ে দিয়ে যাবে।

পান দোকানদারের কথা শুনে আমরা দুইজন আবার পিছন ফিরে এলেঙ্গা চলে এলাম। এলেঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেই টাঙ্গাইল থেকে ভুয়াপুরগামী একটি বাস চলে এলো। বাসটি এলেঙ্গা থেমেই “পানি পড়া, পানি পড়া” বলে চিল্লাতে লাগল। আমাদের আর বুঝতে বাকি রইল না এটাই পানি পড়া হুজুরের বাড়ি যাওয়ার বাস। বাসে উঠে সিট নিয়ে বসার কিছুক্ষণ পরেই বাস যাত্রী দিয়ে ভরে গেল। আমি তখনও বুঝতে পারিনি আমার মত এই বাসের সকল যাত্রীই পানি পড়ার রুগী। একটু পরে বাস ছেড়ে দিলো। ভুয়াপুর যাওয়ার অনেক আগেই বাস ঘর-বাড়িহীন মাঠের মাঝখানে থেমে গেল। ড্রাইভার বলল, যারা পানি পড়া যাবেন তারা এইখানে নামেন।

আমরা দুইজন দরজার কাছেই ছিলাম, তাড়াতাড়ি বাস থেকে নেমে গেলাম। আমরা নামার পরে দেখি আস্তে আস্তে সবাই নামছে। পুরো বাস খালি হয়ে গেল। বাসের ড্রাইভার হেলপার এ অবস্থা দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসল। পুরো বাসের লোকজন পানি পড়ার যাত্রী। ভুয়াপুর যাওয়ার মত একটি যাত্রীও বাসে নাই। উপায়ান্তর না দেখে ড্রাইভার একটু পরে যাত্রী ছাড়াই খালি বাস নিয়ে ভুয়াপুরের দিকে চলে গেল।

এইখানে রোডটি উত্তর পশ্চিম কোনাকোনি লম্বা (তখনও বিশ্বরোডের কাজ শুরু হয় নাই)। আমাদেরকে রাস্তার দক্ষিণ পশ্চিম পার্শ্বে নামিয়ে দিয়েছে। রাস্তা পার হয়ে উত্তর পূর্ব পার্শ্বে চলে এলাম। ট্রাঙ্ক রোডের নিচে কয়েকটি রিক্সা এবং ভ্যান গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। পাকা রাস্তা থেকে একটি কাঁচা রাস্তা সোজা উত্তর দিকে চলে গেছে। এই রাস্তা দিয়ে আরো তিন মাইল যেতে হবে। রিক্সা ষাট সত্তর টাকার নিচে যাবে না। ভ্যানওয়ালারা প্রতি জনে বিশ টাকা ভাড়ায় চারজন নিয়ে যাচ্ছে। আমরা দুইজনে একটি ভ্যানে উঠলাম। ফাঁকা মাঠের ভিতর দিয়ে মাটির রাস্তা। বর্ষার পানিতে তলিয়ে পুরো রাস্তাই নষ্ট হয়েছে। একটু পরপরই ভাঙ্গা। প্রত্যেকটা ভাঙ্গায় নামতে হচ্ছে। এবড়োথেবড়ো ভাঙা রাস্তায় ভ্যানে বসে থাকলেও চলন্ত অবস্থায় মাঝে মাঝে ভ্যানসহ উল্টে পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়। কোথাও কোথাও পানির স্রোতে রাস্তা ভেঙ্গে দুই পাশেই খাড়া কাছাড় হয়ে আছে। এরকম জায়গায় ভ্যান থেকে শুধু নামতেই হয় না ভ্যান ওয়ালার সাথে যাত্রীদেরকেও ভ্যান ঠেলে রাস্তার উপরে তুলে দিতে হয়।

আমাদের অবস্থা এমন হলো “ঘোড়াতে চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল”। আগে জানলে এ রাস্তায় ভ্যান রিক্সায় না চড়ে হেঁটেই রওনা হতাম। তিন মাইল রাস্তার এক মাইলও ভ্যানে বসে থাকার সৌভাগ্য হলো না। যেটুকু রাস্তা ভ্যানে চড়ে গিয়েছি এ্যাবরো থ্যাবরো রাস্তায় ঝাঁকুনির চোটে কোমরের বারোটা বেজে গেলো। এই অবস্থায় কখনও ভ্যানে চড়ে, কখনও ভ্যান ধাক্কিয়ে, কখনও পায়ে হেঁটে যখন হুজুর বাড়ি পৌঁছলাম তখন বেলা পৌনে বারোটা বাজে।

হুজুরের বাড়িতে এলাহী কান্ড। লোকে লোকারণ্য। বাড়ির দক্ষিণ পার্শ্বে ক্ষেতের ভিতর বাজার বসেছে। অন্যান্য হাট বাজারের মতই মাঝখানে অনেক জায়গা ফাঁকা রেখে চারদিক দিয়ে হোটেল-মোটেলসহ বিভিন্ন পসরা নিয়ে দোকান-পাট বসেছে। আবাসিক হোটেলের চেহারা দেখে এমনিতেই হাসি পেল। নয় দশ ফুট টিনের ছাপড়া। ছাপড়াগুলো বাঁশের চাটাই দিয়ে বেড়া দেয়া। ত্রিশ চল্লিশ ফুট লম্বা ছাপড়ার ভিতরে সাত আট ফুট পর পর পাট খড়ি বা ছনখড় দিয়ে খুপড়ি করে পার্টিশন দেয়া। বোর্ডারের আরাম দায়ক ঘুমের জন্য মেঝেতে বিছানো হয়েছে ধানের নাড়া। ধানের নাড়া মার্কা রুমের ভাড়া খুব বেশি নয়। প্রতি দিন দশ টাকা। আরেকটু ভাল হোটেলে থাকতে চাইলে বাঁশের টংয়ের ব্যাবস্থা আছে, ভাড়া একটু বেশি, বিশ টাকা। আরো ভাল হোটেলে থাকতে হলে চৌকির উপর কাঁথা বালিশসহ পঞ্চাশ টাকা। ভিআইপি ভাবে থাকতে চাইলে কাঠের চৌকির উপর লেপ তোষকের ব্যাবস্থা আছে, ভাড়া এক শ’ থেকে দেড় শ’ টাকা।

থাকার হোটেল যে ভাবেই তৈরী হোক না কেন, বোর্ডারের পরিমাণ খারাপ নয়। ভিআইপি রুমে লোকজন চোখে না পড়লেও ধানের নাড়া বিছানো খুপরিগুলিতে কিছু লোকজন চোখে পড়ল। অনেকেই ছিঁড়া কাঁথা বিছিয়ে শুয়ে আছে। তাদের সাথে থাকা কঙ্কালসার রুগিগুলি দেখে খুব মায়া লাগল। এদের চেহারা বেশ ভুষা দেখেই বোঝা যায় এরা হত দরিদ্র। মেডিকেলে চিকিৎসার খরচ যোগাতে না পেরেই হয়তো সুচিকিৎসার আশায় হুজুরের বিনে পয়সার পানি পড়া খেতে এসেছে।

খাবারের হোটেলগুলোও মন্দ নয়। ছনখড় বা বাঁশের চাটাইয়ের তৈরী চাল, চাটাইয়ের বেড়া। কয়েকটি হোটেলের সামনে সাইন বোর্ডে লেখা আছে, ঢাকাই হোটেল, দিল্লী হোটেল, বোম্বাই হোটেল। খাবার আয়োজন খারাপ নয়, মাছ, মাংস, গরু, খাসিসহ অনেক পদের তরকারী হোটেলের সামনে টেবিলে সাজানো আছে।

ক্ষেতের পশ্চিম পাশে আর্মিদের একটি তাঁবু টানানো আছে। হুজুরের বাড়িতে আর্মিদের তাঁবু দেখে আশ্চার্যই হলাম। খোঁজ নিয়ে জানলাম, কোনো এক আর্মি অফিসারের স্ত্রী দীর্ঘ দিন থেকে অসুস্থ্য। অনেক চিকিৎসা করার পরও সুস্থ্য হচ্ছে না। সিএমএইচসহ ঢাকা মেডিকেলের সব ডাক্তার ফেল। মেডিকেলের ডাক্তার ফেল হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হুজুরের পানি পড়া খেতে নিয়ে এসেছেন। আর্মি অফিসারের স্ত্রীর সুচিকিৎসার সহযোগীতা করতে এসে এখানে ছোটখাটো একটি অস্থায়ী আর্মি ক্যাম্প তৈরী হয়েছে। বিষয়টি আমার কাছে কেমন মনে হলো। কৌতুহল বশতঃ এক ফাঁকে তাঁবুর কাছে গিয়ে মহিলাকে দেখে এলাম। খুব খারপ লাগল। মহিলা খুবই অসুস্থ্য। অসুখে অসুখে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। চোখ দু’টো কোটরগত, আরেকজনের সাহায্য ছাড়া উঠতে বসতে পারে না। এই মহিলাকে তিন বেলা হুজুর এসে পানি পড়া খাওয়ানোর পাশাপাশি দোয়া পড়ে চোখে মুখে ফুঁ ফুঁ করে ঝাড়া দিয়ে যান। হুজুরের ঝাড়ায় মহিলা কতটুকু সুস্থ্যবোধ করছেন জানিনা, তবে মনের মধ্যে এতটুকুই সান্তনা খুঁজে পেলাম, স্বামী বেচারা স্ত্রীকে সুস্থ্য করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টাই করে যাচ্ছেন। তার এই চেষ্টার জন্য তাকে মনে মনে ধন্যবাদ না দিয়ে পারলাম না।

বাজারের মাঝখানে একটি বাঁশের খুঁটিতে মাইকের স্পীকার টাঙানো আছে। এই মাইক দিয়েই চিকিৎসার জন্য আগত মানুষ জনের উপচে পড়া ভির নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্রয়োজনে হুজুর মাইক দিয়েই তেল পড়া, পানি পড়াসহ নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

দিনটি ছিল শুক্রবার। আমরা বাজার ও বাজারের আকর্ষণীয় হোটেল মোটেল ঘুরে পানি পড়ার জন্য হুজুরের বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। হুজুরের লোকজন উঠানেই দাঁড়ানো ছিল। তাদের জিজ্ঞেস করতেই বলল, হুজুর জুমার নামায না পড়ে পানি পড়া দিবেন না।

বাড়িটি জমি থেকে বেশ উঁচু। এলাকাটি নিচু এলাকা। বন্যার কারণেই হয়তো বাড়িটি মাটি কেটে জমি থেকে অনেক উঁচু করেছে। শুধু এই বাড়িটিই নয় ঐ এলাকার সব বাড়িই জমি থেকে প্রায় সাত আট ফুট উঁচু। হুজুরের বাড়িটি দক্ষিণমুখী। বাড়ির সামনে পূর্ব পশ্চিম লম্বা দু’টি পুরানো টিনের ঘর। দুই ঘরের মাঝখানে তিন চার হাত ফাঁক। দুই ঘরের মাঝের এই ফাঁক দিয়েই বাড়ির ভিতরে ঢুকতে হয়। দুইজন আনসার বাড়ির ভিতরে ঢোকার রাস্তায় লাঠি নিয়ে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে। হুজুরের নিজস্ব লোকজন ছাড়া বাইরের কাউকেই বাড়ির ভিতরে ঢুকতে দেয়া হয় না।

বাহির বাড়ির উঠানে মধ্য বয়স্ক একজন গ্রামের কৃষক দাঁড়ানো ছিল। পরনে লুঙ্গি, গায়ে কোড়া গেঞ্জি, ঘাড়ে গমছা। তাকে দেখে মনে হলো এই এলাকারই লোক হবে। জিজ্ঞেস করে উত্তর পেলামও তাই। লোকটিকে হুজুরের পানি পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই তিনি যে বর্ননা দিলেন তা হলো এই– হুজুর ছোট থেকেই ইসলামীভাবাপন্ন লোক। বিনা কারণে নামায রোযা কাযা করেন না। তবে তিনি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন নাই, স্কুল কলেজেই লেখাপড়া করেছেন। বিএ পড়ার সময় পাশের বাড়ির এক বয়স্ক মহিলা পেটের ব্যাথায় চিল্লাচিল্লি করতে ছিল। তার চিল্লাচিল্লি দেখে উপযাচক হয়েই তিনি এক গ্লাস পানিতে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে খেতে দেন। পানিপড়া খেয়ে মহিলার পেটের ব্যাথা সেরে যায়। ঘটনাটি মুহুর্তেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে তাদের সমস্যা নিয়ে আসে। তাদেরকেও পানিপড়া দেন। তার পানিপড়া খেয়ে অনেকেই সুস্থ্যবোধ করে। এই খবর আস্তে আস্তে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিদিনই বিনে পয়সায় পানিপড়া নিতে দূরদূর থেকে লোকজন আসতে থাকে। এক সময় ট্ঙ্গাাইলের ডিসির কানেও খবরটি চলে যায়, সেও তার সমস্যা নিয়ে আসেন। তার পানিপড়া খেয়ে নাকি তিনিও সুস্থ্য হন। হুজুরের পানিপড়ায় উপকার পেয়ে ডিসি সাহেব খুশি হয়ে তড়িঘড়ি হুজুরের বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেন। পরবর্তীতে হুজুরের বাড়িতে আগত লোকজনের ভির সামাল দেয়ার জন্য আনসারের ব্যবস্থাও নাকি তিনিই করে দিয়েছেন।

লোকটির বর্ননা অনুযায়ী কথার কিছু নমুনা আমিও পেলাম। বাড়ির উঠানেই বিদ্যুতের খুঁটি লাগানো আছে। সেই সময়ে গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ ব্যাবস্থা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু অখ্যাত গ্রামের এই বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। সামনের বাজারসহ পুরো বাড়িই বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত। তার বর্ননা আর বিদ্যুতের বিশেষ ব্যাবস্থা দেখে হুজুরের প্রতি কিছুটা বিশ্বাস স্থাপন হলো। তার কারণও আছে, পানি পড়ার বিনিময়ে তিনি কোনো টাকা পয়সা নেন না। বিনে পয়সায় পানি পড়া দেন। টাকা পয়সা কামানোর ধান্দাবাজি নেই। দু’টাকা করে নিলেও হাজার হাজার টাকা রোজগার করতে পারেন কিন্তু এধরনের কোনো কিছু চোখে পড়ল না। তবে মনে হলো হুজুরের উত্থান খুব বেশি দিন আগে নয়। বিদ্যুতের খুঁটি, সামনের বাজার, মানুষ জনের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা, সব কিছুতেই নতুনত্ব অনুমিত হলো।

–ঃ চলবে ঃ–

Loading

Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *