আলেয়া (প্রথম পর্ব)
(২০১৩ সালে হেনা ভাইয়ের পাঠানো “স্বপ্ন বাসর” উপন্যাস পড়ে সেই রাতেই লেখা ছড়াটি অনেক লম্বা হওয়ায় তিন পর্বে পোষ্ট করা হলো)
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
আলেয়া তুমি আলেয়া হয়ে
রইলে আমার মনে
অনেক স্মৃতি হারিয়ে গেলেও
আছো হৃদয় কোনে।
হাঁটু অবধি কুন্তল তোমার
পটল চেরা চোখ
আজো ভুলিনি হাসি হাসি মুখ
বুক ভরা তাই শোক।
চপলা চঞ্চলা হরিণীর মত
বিচরিতে গ্রামময়
সরকার বাড়ির মেয়ে হওয়াতে
পেত যে সবাই ভয়।
আম কাঁঠালের বাগানে বাগানে
বাঁশ বাগানের তলে
পুকুর ঘাটের উঠলে কথা
চোখ ভরে যায় জলে।
হেথায়-হোথায় মাঠে-ঘাটে
ঘুরেছি ফিরেছি মোরা
অনেকে বলতো, ‘খুব ভাল লাগে
কপোত কপোতি জোড়া’।
চাঁদনী রাতের মিষ্টি আলোয়
গরুর গাড়ীর পর
কত না কথা বলেছি মোরা
পাশাপাশি রাতভর।
খড়ের গাঁদায় লুকোচুরি খেলে
হেসে হতে কুটিকুটি
কোনো কিছুতে বাধা ছিল না
ছিল না তো ভ্রুকুটি।
পানের বরজে পালিয়ে পালিয়ে
করতে কুহু কুহু
খুঁজে খুঁজে আমি পথহারা হয়ে
বলতাম উঁহু উঁহু।
কখনও হাতে জবা ফুল পেলে
খোঁপাতে গুঁজে দিয়ে
তাকিয়ে থেকে মন জুড়াতাম
প্রেমিকের ভাব নিয়ে।
মাঠ পেরিয়ে বিলে যেতে যেতে
রোদ্রে পোড়াতো মাথা
ওড়নার আঁচল মোর মাথায় দিয়ে
বলতে, ‘এই তো ছাতা’।
ফিরতি পথে আষাঢ়ের মেঘে
বৃস্টিতে ভিজে ভিজে
শরীরের কাপড় একাকার হয়ে
দেখতে হয়েছিল কি যে!
চাহিতে পারিনি কেহ কাহারে
শরমের মাথা খেয়ে
ঝাপ দিলে তুমি পদ্ম পুকুরে
উঠলে আবার নেয়ে।
সাঁতার জানিনা গায়ে ছিটালে
সেই পুকুরের জল
বৃস্টির সাথে পুকুরের পানি
দিলে মোরে অবিরল।
সেই ভিজাতে জ্বর হলো মোর
তুমি ছিলে সদা পাশে
সে সব কথা মনে হলে আজো
চোখ ফেটে জল আসে।
নিজে হাতে এনে দুধের গ্লাসে
অর্ধেক করে পান
বাকি অর্ধেক খাওয়াতে মোরে
কত যে ছিল টান?
মাছের মুড়োর মুড়িঘন্টো
কিংবা মুরকি-মুড়ি
ভুলতে পারিনি ফোকলা দাঁতের
তোমার ‘সই’ সেই বুড়ি।
মামাতো বোন হেনাকে তুমি
অপমান করে করে
চোখে চোখে মোরে দিতে পাহারা
সারা দিনরাত ভরে?
রুই মাছ রেঁধে এনেছিল হেনা
করলে কত কলরব
হিংসে করে পুরো বাটি ধরে
দূরে ছুঁড়ে দিলে সব।
ঝামটা দিয়ে রাগ রাগ মুখে
বললে অকথ্য কথা
গালি দেয়ার পরও চুপ করে হেনা
দাঁড়িয়ে রইলো তথা।
‘কি সব রেধেছে’, বললে মামীকে
‘পুরো লবনে ভরা’
এসব কথা সত্য ছিল না
সব ছিল মনগড়া।
তোমার কথায় মুখ কালো করে
ঘর থেকে গেল হেনা
তোমার আচরণ ওই খানে মোর
হয়েছিল সব চেনা।
‘আমি শুধু তোমার অন্য কারো নই’
বললে আড়ালে ডেকে
আর কেউ নয় শুধু তোমাকে
ভেবেছিলাম সেই থেকে।
মামার বাড়ির কত যে আদর
তোমার কারণে তাই
থাকতে চেয়েও থাকতে দিলে না
মনে হলে ব্যাথা পাই।
মামীর আদর উপেক্ষা করে
জোর করে এলে চলে
আফসোস কত করিল তারা
মোর কথা বলে বলে।
এসব কথা মনে হলে আজো
ভেসে উঠে সেই মুখ
বলিতে চেয়েও বলিতে পারিনা
জমাট বাঁধা মোর বুক।
গরুর গাড়িতে নিজে ঘেমে নেয়ে
আমাকে বাতাস করে
কত সুখে যেন তাকিয়ে থাকলে
মোর বাহুটি ধরে।
ছইয়ের উপর ঝরঝর করে
বৃস্টি পরার পর
গায়ের পরে হেলান দিয়ে
ঘুমালে দিনভর।
অনেক কথাই মনে পরে আজো
ভুলে যাইনি কিছু
অতীত জীবন যত পিছে যাক
স্মৃতি ছাড়েনা পিছু।
জন্মের পরে মা মরো মরো
আমার জীবনো যায়
নিয়েছিল কোলে আধমরা মোরে
তোমার দুখিনী মায়।
সুস্থ্য হয়েই তোমার মাকে
বলেছিল মা মোর
মরা ছেলেকে বাঁচিয়ে রেখেছিস
আজ থেকে হলো তোর।
সেই থেকে যে তোমার মাকেও
বলিতাম আমি মা
দুইটি মায়ের আদর পেয়ে
জুড়াইতো কলিজা।
মা হওয়াতে সারা দিনমান
তার কাছে বসে বসে
কত না বিচার দিতাম মোরা
পরস্পর রোষে রোষে।
আদরের সুরে মা ধমকাতো
আজো যাইনি ভুলি
বুক ভরা মোর সে সব কথা
কাকে কব মন খুলি?
সেই শিশুকালে দুই মায়ে মোর
করেছিল বিয়ে ঠিক
তোমার মুখে সে কথা শুনে
দিয়েছি কত যে ধিক।
সবার মতেই হয়েছিল নাকি
এই ঘটনাটি পাকা
দীর্ঘদিন গাঁয়ে না যাওয়াতে
কথা ছিল সব ঢাকা।
(চলবে)
Recent Comments