মৃত মায়ের অবুঝ শিশু

(রানা প্লাজায় নিহতদের স্মরণে)
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

সকাল বেলা শিশুর হাতে
দুইটি টাকা দিয়ে
বলল হেসে, আনব মিঠাই
আসার সময় নিয়ে।

এই না বলে মা যে তাহার
অনেক কথা বলে
গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে
গার্মেন্টসে যায় চলে।

কিন্তু গিয়ে দু’ঘন্টা পর
বিল্ডিং ধ্বসে পরে
ছাদের নিচে ইটের চাপায়
গেল সে যে মরে।

মা মরেছে শিশু জানে না
আছে আশায় আশায়
সন্ধার পরে মিঠাই নিয়ে
আসবে যে মা বাসায়।

মায়ের হাতের রান্না করা
ভাতগুলো সে খেয়ে
বিকাল থেকে মিস্টির আশায়
আছে পাথটি চেয়ে।

সন্ধার পরও মা আসে না
কাঁদছে একা একা
ক্ষিদে লেগেছে অনেক রাতি
পায়না মায়ের দেখা।

কাঁদতে কাঁদতে অবুঝ শিশু
একাই ঘুমিয়ে পড়ে
সকাল বেলা তাকিয়ে দেখে
কেউ নাই তার ঘরে।

হাঁড়ির কাছে গিয়ে দেখে
হাঁড়িতে নাই ভাত
ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদছে শিশু
খায়নি সারা রাত।

কান্না দেখে বাড়ির মালিক
জিজ্ঞেস করে তারে,
‘কাঁদছিস কেন সকাল বেলা
এমনি বারে বারে’?

বলছে শিশু কান্না করে,
‘মা রাঁধে নি ভাত
না খেয়ে যে ছিলাম আমি
শুয়ে সারারাত’।

এমন সময় টেলিফোনে
উঠল কেঁপে বুক
শিশুর পানে তাকিয়ে থেকে
শুকিয়ে গেল মুখ।

বলছে মালিক, ‘কাঁদিসনে আর
তোর মা আছে শুয়ে
আয় না সাথে, হেথায় গিয়ে
দেখবি তারে ছুঁয়ে’।

এই না বলে সাথে নিয়ে
গেল লাশের ঘর
অবুঝ শিশু মাকে দেখে
পড়ল বুকের পর।

বলছে কেঁদে, ‘শুয়ে আছিস,
ভাত দিবি না চল
কোথা রেখেছিস মিঠাইগুলো
আঙুর, আপেল ফল’?

‘উঠ না মা, দে খেতে দে,
ক্ষিদে পেয়েছে খুব
এতো ডাকি তারপরেতেও
থাকিস কেন চুপ’?

মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে
টানছে বারে বারে
মা মরেছে এই কথাটা
কে বুঝাবে তারে?

মাকে বোঝে খাবার বোঝে
আর বোঝে না কিছু
এই শিশুকে টানছে সবাই
ছাড়ে না মা’র পিছু।

মায়ের কানে মুখটা দিয়ে
মা মা করে ডাকে
শিশুর কান্নায় কোন পাষাণীর
চোখের পানি থাকে।

অবুঝ শিশুর কান্ড দেখে
নিজের কান্না পায়
করুণ কান্না সহ্য হয়না
বুকটা ফেটে যায়।

দুই হাত তুলে এই মোনাজাত
করছি ওগো প্রভু
এমন দৃশ্য বিশ্বে কোথাও
আর দিও না কভু।

(ছবি: গুগল।)

Loading

Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *